চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ১৮ টি তথ্য
চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা, সম্পর্কে আজ আমরা এই পোস্টে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আলোচনা করতে চলেছি। জ্বর, দুর্বলতা এবং অতিসার ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে চিরতা খুবি উপকারি। তেঁতো এই গাছে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা
- চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা
- খালি পেটে চিরতা খেলে কি হয়
- চিরতার পুষ্টি উপাদান
- চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ
- চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয়
- শেষ কথাঃ চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা
চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা
চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা, জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য। চিরতা প্রাচীন ভেষজ উপাদান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান। প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধ হিসাবে ব্যাবহার করে আসছে এই চিরতা কে। এর ঔষধি গুনাগুণ জানলে আপনি ও চিরতা খাওয়া শুরু করে দিবেন। তাহলে চলুন এবার আপনাদের জানাই চিরতার বিস্ময়কর কিছু উপকারিতা।
- চিরতা আমাদের দেহের রক্তকে বিশুদ্ধ করে এবং ত্বকের নানা সমস্যা সমাধান করে থাকে।
- চিরতার রস আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর টায়ফোয়েট ও ম্যালেরিয়ার মত জ্বর কমাতে কাজ করে।
- চিরতা আমাদের শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এবং ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
- চিরতার রস আমাদের ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে কার্যকারী।
- চিরতার রস আমাদের দেহের মধ্যে থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- চিরতার রস পান করলে আপনার চুলের গোঁড়া শক্ত এবং মজবুত হবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে।
- চিরতার রস সেবনে শরীর শীতল হয় এবং মানসিক চাপ কমাতে কাজ করে।
- চিরতার রস পান করলে পেটের সমস্যা যেমন হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করে থাকে।
- চিরতা জ্বর ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ভাইরাস নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- চিরতার আরো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে টক্সিন দূর করে এবং লিভার ভালো রাখে।
- চিরতার আরো উপাদান মহিলাদের ঋতুস্রাব এবং সংক্রমণ কমাতে ভূমিকা পালন করে।
- চিরতা হাড়ের দুর্বলতা কাটিয়ে হাড় গঠনে সাহায্য করে থাকে।
- চিরতা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- চিরতা আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চর্মরোগ এবং আচিল নিয়ন্ত্রণে।
- চিরতা আরো কার্যকারী ভাবে কাজ করে কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে।
- চিরতা আমাদের মানসিক চাপ কমিয়ে স্নায়ু ভালো রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- চিরতা ডায়রিয়া এবং পেটের যে কোনো সমস্যার জন্য কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
- চিরতার বড় বৈশিষ্ট্য যে চিরতা আমাদের শরীর থেকে ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।
খালি পেটে চিরতা খেলে কি হয়
খালি পেটে চিরতা খেলে কি হয়, এই সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আমরা এখন জানতে চলেছি খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের দেহের নানা সমস্যার জন্য যুগ যুগ ধরে চিরতা ব্যাবহার হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি না চিরতা খাওয়ার সঠিক সময়, সঠিক নিয়ম। খালি পেটে যে চিরতা খেলে একটু বেশি উপকার পাওয়া যায় এটা আমরা অনেকেই জানি না। চলুন এবার জেনে নি খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা।
- খালি পেটে চিরতা খেলে পেটের ক্ষতিকারক পদার্থ ধ্বংস হয় এবং অন্ত পরিষ্কার থাকে।
- খালি পেটে চিরতা খেলে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমে।
- খালি পেটে চিরতা খেলে আমাদের দেহের পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করে।
- খালি পেটে চিরতা খেলে শরীরে জমে থাকা এসিড বের হয়ে যায়।
- খালি পেটে চিরতা খেলে লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়।
- খালি পেটে চিরতা খেলে আমাদের দেহের রক্ত পরিষ্কার হয়।
- খালি পেটে চিরতা খেলে ত্বকের নানা সমস্যা দূর হয় এবং এ উজ্জলতা বাড়ে।
- ঘুম থেকে উঠার পর যদি বমি বমি ভাব হয় বা অরুচির সমস্যা হয় তাহলে খালি পেটে চিরতা খেলে সেটা দূর হয়ে যায়।
- খালি পেটে চিরতা খেলে শরীর সতেজ থাকে এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যায়।
চিরতার পুষ্টি উপাদান
এতক্ষন আমরা জানলাম চিরতার উপকারিতা এবং খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা। এখন আমরা জানতে চলেছি চিরতার পুষ্টি উপাদান। চিরতা এমন একটা জিনিস যার প্রতিটা পাতায় এবং শিরায় শিরায় পুষ্টি এবং ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর। চিরতা নিয়মিত এবং পরিমান মত খাওয়াতে আমরা নানা রোগ বালায় এবং অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। সঠিক পরিমান মত নিয়ম মেনে যদি আমরা চিরতা সেবন করতে পারি তাহলে অনেক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবো। এবার দেখি চিরতার পুষ্টি উপাদান।
১০০ গ্রাম চিরতাতে যে পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকেঃ
নম্বর | উপাদান | পরিমান |
---|---|---|
১ | ডায়েটরি ফাইবার | ৫.৮ গ্রাম |
২ | প্রোটিন | ৪.১ গ্রাম |
৩ | কার্বোহাইট্রেড | ২৮.৫ গ্রাম |
৪ | ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম |
৫ | ভিটামিন সি | ০.৫ গ্রাম |
৬ | আয়রন | ৩.২ মিলিগ্রাম |
৭ | ক্যালসিয়াম | ১৯০ মিলিগ্রাম |
৮ | ম্যাগনেসিয়াম | ৮৫ মিলিগ্রাম |
৯ | পটাশিয়াম | ৭৯০ মিলিগ্রাম |
১০ | ফসফরাস | ৫০ মিলিগ্রাম |
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
চিরতা খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম আছে। আপনি যদি এই নিয়ম গুলো মেনে চিরতা খেতে পারেন তাহলে আশা করি অনেক উপকৃত হতে পারবেন। চিরতা খাওয়ার নিয়ম ঔষধি গুনাগুণের উপর নির্ভর করে থাকে। বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিভিন্ন নিয়ম মেনে খেতে হয় চিরতা। চিরতা খাওয়ার কিছু নিয়ম আপনাদের সাথে আলোচনা করা হল।
চিরতার গুড়োঃ
- প্রস্তুতিঃ শুকনো চিরতার গুড়ো ১-২ চা-চামচ পরিমানে নিতে হবে।
- ব্যাবহারঃ এবার এটি হালকা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার করে পান করতে পারেন।
চিরতার রসঃ
- প্রস্তুতিঃ চিরতার গাছ অথবা মুল ১-২ ঘণ্টা মতো পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- ব্যাবহারঃ এবার এই পানি ছেঁকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে সামান্য পরিমানে পানি পান করুন।
চিরতার চাঃ
- প্রস্তুতিঃ চিরতার শুকনো গাছ পানিতে সিদ্ধ করে নিন।
- ব্যাবহারঃ এবার চা এর মত করে সেই পানি পান করুন প্রতিদিন ১-২ বার।
চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ
চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ এই বিষয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে চলেছি। চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা জেনে অনেকেই প্রতিদিন অধিক পরিমানে চিরতা খেতে থাকেন। এটা আমাদের সাস্থের জন্য অনেক ঝুকি পূর্ণ হয়ে যায়। কেননা চিরতা খাওয়ার একটা নিয়ম আছে এবং একটা পরিমান আছে। সঠিক নিয়ম ও সঠিক পরিমান মত না খেলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার আশ্চর্য ১০ টি উপকারিতা
চিরতা খাওয়ার আগে আপনাদের এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা দরকারি। যেমন আপনি যদি হজমের সমস্যা বা দুর্বলতার জন্য খান তাহলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত সেবন করলেই হয়ে যাবে। আবার যদি কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস এর জন্য সেবন করেন তাহলে ১ থেকে ২ মাস খেতে পারেন। কিন্তু এর বেশি খাবেন না। আর যদি খান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
এতক্ষন আমরা জানলাম চিরতার উপকারিতা এবং এর ভালো দিক গুলো। এবার আমরা জানতে চলেছি চিরতার অপকারিতা সম্পর্কে। এর যেমন অসংখ্য উপকারি গুনাগুণ আছে তেমন কিছু অপকারি গুনাগুণ ও আছে। তাই চিরতা খাওয়ার আগে এই সকল বিষয়ে যেনে রাখা দরকারি। তবে নিয়ম মেনে খেলে কোনো ক্ষতি হবে না। চলুন এবার দেখি চিরতার অপকারি কিছু গুনাগুণ।
- অতিরিক্ত চিরতা সেবন করলে রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত চিরতা সেবনের ফলে মহিলাদের গর্ভপাতের ঝুকি বেড়ে যায়।
- অনেক দিন ধরে চিরতা ব্যাবহার করলে কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- চিরতা আমাদের হজমে সাহায্য করে কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাবহারের ফলে বিপরিত পতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত চিরতা সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি এবং এই রকম আরো নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- চিরতা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে তাই অতিরিক্ত সেবনের ফলে আমাদের দেহের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- আবার অতিরিক্ত চিরতা সেবনের ফলে অ্যালার্জি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয়
গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে এখন আমরা জানতে চলেছি। চিরতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আমাদের দেহের নানা সমস্যার সমাধান করে থাকে। কিন্তু এটা খাওয়ার আগে এর বিষয়ে যেনে সতর্কতা অবলম্বন করে খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের চিরতা না খাওয়ায় ভালো। কারন এতে করে মা এবং শিশু দুই জনেরই সমস্যা হতে পারে। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানি চলুন।
.webp)
চিরতাকে গরম প্রকৃতির বলে মনে করা হয়। যা গর্ভবতী মহিলা সেবন করলে জরায়ুর সংকোচন বেড়ে যেতে পারে। এবং ডেলিভারি বা গর্ভপাতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে। আবার চিরতা রক্তচাপ কম করে দিতে পারে তাই এটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক ঝুকি পূর্ণ বা বিপদজনক। তাই গর্ভাবস্থায় চিরতা না খাওয়ায় ভালো। এটি নানা সমস্যার কারন হতে পারে।
শেষ কথাঃ চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা
চিরতার বিস্ময়কর উপকারিতা, সম্পর্কে এতক্ষন আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম। চিরতার উপকারিতা, চিরতার অপকারিতা, চিরতার পুষ্টি উপাদান, চিরতা খাওয়ার নিয়ম, গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয় এই সকল বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে এই আর্টিকেলে। চিরতা সেবনের আগে এই বিষয়গুলো যেনে তার পর চিরতা সেবন করবেন। এতে আপনার স্বাস্থ্য ঝুকি কমে যাবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হতে পেরেছেন। আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
স্বপ্ন বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url