কাঁচা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের এই আর্টিকেলে বলবো কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। এবং
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
কলাতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী অনেক উপাদান। যেমন ভিটামিন, আমিষ, খনিজ ও
ক্যালোরির একটি ভালো উৎস। আর তাই কলা আমাদের দেহের জন্য অনেক উপকারী।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঁচা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাঁচা কলার ১০ টি উপকারিতা
- কাঁচা কলা খাওয়ার অপকারিতা
- কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
- খালি পেটে কলা খেলে কি গ্যাস হয়
- প্রতিদিন কয়টি কলা খাওয়া উচিত
- ওজন কমাতে কলার উপকারিতা
- দুধ কলা খাওয়ার উপুকারিতা
- শেষ কথাঃ কাঁচা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঁচা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নিন। সবাই
সাধারনত পাকা কলা খেতে পছন্দ করে। কিন্তু খুব সংখ্যক লোক আছে যারা কাঁচা কলার
পুষ্টি গুন সম্পর্কে জানে না এবং কাঁচা কলাও খায় না। কলা এমন একটি ফল যা সারা বছর
পাওয়া যায়। কলা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন কলার হাজারো পুষ্টিগুণ আছে। পাকা কলার
যেমন অনেক গুনাগুন আছে ্তেমন কাঁচা কলারও অনেক গুনাগুণ আছে।
কাঁচা কলায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং আরো নানা পুষ্টি উপাদান।
যা আমাদের দেহের জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচা কলা বদহজম, ক্যান্সার, ডায়েবেটিস
ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে থাকে। আমাদের দেহের জন্য সকল প্রকার ফলেরই দরকার হয়ে
থাকে। কাঁচা কলা আমাদের অনেক উপকার করে আবার কিছু অপকার ও করে। কলা খাওয়ার নিয়ম
মেনে খেলে কোন সমস্যা হয় না।
কাঁচা কলার ১০ টি উপকারিতা
কাঁচা কলা আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকার করে থাকে। তাই আমাদের খাদ্য
তালিকায় কাঁচা কলা রাখা উচিত। কাঁচা কলার অনেক পুষ্টিগুণ আছে। আর কি কি উপকার করে
কাঁচা কলা চলুন জেনে নিন।
বদহজমের সমস্যা সমাধান করেঃ কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় এটি
পেটের সমস্যা সমাধান করতে কার্যকারী। এটি পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়ায়
করে এবং পেটের সমস্যা দূর করে।
কিডনির সমস্যা দূর করেঃ কাঁচা কলায় থাকা পুষ্টি উপাদান কিডনির কার্যকারিতা
উন্নত করতে বড় ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে কিডনির ক্যান্সার থেকে
রক্ষা করে।
ওজন কমাতেঃ আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আর চিন্তা না
করে নিয়মিত কাঁচা কলা খেয়ে দেখুন আপনার ওজন কমে যাবে। কাঁচা কলায় থাকা ফাইবার
আপনার পেট দীর্ঘ সময় ধরে ভরা রাখে ফলে আপনার ক্ষুধা কম লাগবে। ফলে আস্তে আস্তে
আপনার ওজন কমে যাবে।
ডায়রিয়া ভালো করেঃ কাঁচা কলার নানান উপকারিতার মধ্যে এটি একটি অনেক
কার্যকারী উপকার। কাঁচা কলা ডায়রিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এবং আপনার
পেটের ইনফেকশান, মাথা ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দূর করে থাকে।
চুল ও ত্বকের জন্যঃ কাঁচা রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬
যা আমাদের ত্বক কে উজ্জ্বল রাখতে এবং চুল পরা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটি
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পুষ্টির ঘারতি পুরন করেঃ আমাদের শরীরের জন্য প্রতিদন অনেক পুষ্টির প্রয়োজন
হয়ে থাকে আর এই পুষ্টির ঘারতি পুরন করতে কাঁচা কলার জুড়ি মেলা ভার।
রক্তচাপ নিয়ত্রনে রাখেঃ কাঁচা কলা ধমনী ও রক্তনালীর উপর চাপ থেকে চাপ
কমায়। তার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ত্রনে নিয়ে আসতে সহজ হয়।
হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় এটি
হৃদরোগের ঝুকি কমাতে পারে। এবং আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার নিয়ত্রনে আনে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ত্রন রাখেঃ কাঁচা কলায় অতি মাত্রায় ভিটামিন বি৬
থাকায় এটি ডায়েবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সাহায্য করে। এবং
এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার বা আঁশ যা শর্করার পরিমান নিয়ত্রন রাখে।
হাড় মজবুত করতেঃ কাঁচা কলায় থাকা ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন সি আমাদের শরীরের
হাড় মজবুত করে। হাড়ের নানা সমস্যা সমাধান করে।
কাঁচা কলা খাওয়ার অপকারিতা
সব কিছুরিই যেমন ভালো দিক থাকে আবার খারাপ দিক থাকে তেমন কাঁচা কলারো ভালো দিকের
সাথে কিছু খারাপ দিক ও আছে। কাঁচা কলা যেমন আমাদের শরীরের নানা সমস্যার সমাধান
করে থাকে তেমন এটা নিয়মের বাহিরে খেলে কিছু সমস্যা করে থাকে। চলুন সমস্যা গুলো
যানা যাক
- খালি পেটে কাঁচা কলা না খাওয়ায় ভালো কারন খালি পেটে খেলে গ্যাস এর সমস্যা হতে পারে।
- রাতে না খাওয়ায় ভালো কারন রাতে খেলে অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে।
- ঠাণ্ডা লাগলে কাঁচা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বেশি কলা খেলে ঠাণ্ডা লাগার পরিমান বেড়ে যায়।
- কলাতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান একটু থাকে যা বেশি পরিমানে খেলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যাদের শ্বাসের সমস্যা আছে তাদের বেশি কলা না খাওয়ায় ভালো।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ এর শেষ নেই। কাঁচা কলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফাইবার
থাকে যা আমাদের দেহের জন্য কার্যকারী। তাই প্রতিদিন নিয়মিত একটা করে কলা খাওয়া
শুরু করে দিন। চলুন যেনি ১০০ গ্রাম কাঁচা কলায় কি পরিমানে পুষ্টিগুণ থাকে।
- পটাশিয়াম থাকে ০.৫৮ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ২২.৮৪ গ্রাম
- ফাইবার ২.৬ গ্রাম
- প্রোটিন ১.০৯ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ২৭ গ্রাম
- চর্বি ০.৩৩ গ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ২২ মিলিগ্রাম
- চিনি ১২.৩৩ গ্রাম
- আয়রন ০.২৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি ৮.৭ মিলিগ্রাম
- থায়ামিন ০.০৩১ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন ০.৬৬৫ মিলিগ্রাম
- ম্যাগানিজ ০.২৭ মিলিগ্রাম
- জিংক ০.১ মিলিগ্রাম
- রিবফ্লাভিন ০.০৭৩ মিলিগ্রাম
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঁচা খেলে মা ও বাচ্চা দুই জনের জন্যই অনেক উপকারি। কলা এমন একটি ফল
যা কাঁচা, পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায় এবং অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মহিলার প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর সেই পুষ্টির উৎস
হিসাবে আপনি কলা খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় পাকা কলা খেলে বাচ্চার গায়ের রং সুন্দর
হয়।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
কিন্তু বেশি পরিমানে পাকা কলা খাওয়া ঠিক না গর্ভবতী মহিলার। কারন অতিরিক্ত
পাকা কলা খেলে বাচ্চার নিউমোনিয়া হউয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁচা
কলা খেলে কোন সমস্যা হয় না শুধু উপকার পাবেন। কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম
ও মিনারেল আছে। এবং আছে ডায়েটরি ফাইবার যা গর্ভাবস্থায় খেলে গ্যাস্ট্রিক এর
সমস্যা দূর হয়।
তাই গর্ভবতী মহিলার নিয়মিত কাঁচা কলা খাওয়া উচিত। তবে সঠিক নিয়মে খেতে হবে।
সব জিনিসেরই একটা নিয়ম থাকে তাই নিয়ম মেনে খেলে অনেক উপকার পাবেন।
খালি পেটে কলা খেলে কি গ্যাস হয়
সকালের নাস্তায় সচরাচর অনেকেই কলা খেতে পছন্দ করে। কারন কলায় রয়েছে হাজারো
পুষ্টিগুণ আর তাই সবাই কলা খেতে পছন্দ করে। কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, ফাইবার,
ম্যাগানিজ ইত্যাদি। এইসব উপাদান থাকায় কলা দেহের নানা পুষ্টি চাহিদা পুরন করে।
কলা শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমায়। কলায় রয়েছে অতিমাত্রায় ক্যালরি একটি
কলায় ৮৯ ক্যালরি থাকে। কলায় পানির পরিমান বেশি থাকায় এটি শরীরের পানি শূন্যতা দূর
করে।
এরকম নানা উপাদান থাকার পরও খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারন
কলায় এসিড ও পটাশিয়াম থাকায় খালি পেটে খেলে গ্যাস হয়। হজমের সমস্যাও দেখা দিতে
পারে। কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে তাই খালি পেটে কলা না খেয়ে কোন
ফলের সঙ্গে খাওয়া উচিত। খালি পেটে সুধু কলায় নয় যে কোন ফল খাওয়া উচিত নয়। তবে
অন্য ফলের সঙ্গে কলা খেলে সমস্যা হয় না।
প্রতিদিন কয়টি কলা খাওয়া উচিত
কলার গুনের শেষ নেই ডাক্তাররা দুধ ও ডিমের পর কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কলা
আমাদের দেহের জন্য ভালো কাজ করে। কলা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত কলা খেলে হার্ট এর সমস্যা এবং ক্যান্সারের ঝুকি কমায়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কলা পুষ্টির একটি বড় উৎস। কলা আমাদের দেহের জন্য উপকারি
কিন্তু আমারা যানি না যে কখন কলা খেতে হবে এবং কয়টা করে কলা খাওয়া দরকার।
আমাদের প্রতিদিন দুইটি করে কলা খাওয়া ভালো। দুইটি কলা আমাদের সাস্থের জন্য
উপকারি। তবে কলা যদি খুব বড় হয় তাহলে ১ টা করে মাঝারি হলে ২ টা এবং খুব ছোট হলে ৩
টা করে প্রতিদিন খেতে পারেন। তবে রাতে কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সকালে অথবা
বিকালে কলা খেতে হবে। এই ভাবে নিয়মিত কলা খেলে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।
ওজন কমাতে কলার উপকারিতা
আপনি যদি আপমার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় কলা
অ্যাড করে নেন। আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ২ টি করে কাঁচা কলা রাখেন। কাঁচা
কলা ফাইবার জাতিয় খাবার। ফাইবার অনেক সময় ধরে পেট ভরিয়ে রাখতে পারে। তাই ক্ষধা কম
লাগে এবং খবার কম খেতে হয়। ফলে ধীরে ধীরে মেদ ও ওজন কমে যায়।
ওজন কমানোর জন্য আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে কাঁচা কলা। আর তাই আপনি ওজন
কমাতে আপনি কাঁচা কলা বেছে নিতে পারেন। প্রতিদিন নিয়মিত এইভাবে কাঁচা কলা খেলে
আপনি অনেক উপকার পাবেন।
দুধ ও কলা খাওয়ার উপুকারিতা
কলা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি একটি ফল। সেটা কাঁচা কলাই হোক বা পাকা কলা।
আপনি যদি প্রতিদিন ২ টা করে কলা খেতে পারেন তাহলে আপনার দেহের জন্য অনেক উপকার
হবে। পাকা কলা না থাকলে কাঁচা কলা খাবেন। আপনি সুধু কলা না খেয়ে দুধের সংগে খেতে
পারেন। কারন দুধে থাকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যা আমাদের দেহের
শক্তি যোগাতে কার্যকারী।
দুধে আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে ১০০ গ্রাম দুধে প্রায় ৮৯ ক্যালরি থাকে। আর কলা
যে সধু আমাদের শক্তি যোগায় তা না কলা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য
করে। দুধ ও কলা একসাথে খাওয়া হয় সাধারনত ওজন বাড়ানোর জন্য। আপনি যদি আপনার
ওজন বৃদ্ধি করতে চান তাহলে দুধ আর কলা এক সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন ভালো ফলাফল
পাবেন।
শেষ কথাঃ কাঁচা কলা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যা কাঁচা কলা
খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা। এবং কাঁচা কলা খেলে কি কি উপকার হয় আর কখন কখন
খেতে হবে। কাঁচা কলা খেলে ওজন কমে, গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দূর হয়, ডায়রিয়া ভালো
করে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছি। তাই এই আর্টিকেল পরে যদি আপনার
ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং কমেন্ট করতে
ভুলবেন না।
স্বপ্ন বাংলার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url